স্টাফ রিপোর্টার : দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাঢ়া গ্রামের ইউপি সদস্য নূর আলী শেখের বাড়িতে চলছে মাতম। স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, জনসেবার কারণেই হত্যার শিকার হতে হয়েছে তাকে এবং আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ দলীয় প্রতিপক্ষের লোকজন এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে।
এদিকে পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে পুলিশের ধারণা ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে।
শুভরাঢ়া ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নূর আলী শেখ ও তার ছেলে রবিবার (৭ মার্চ) রাত আটটার দিকে স্থানীয় বাবুরহাট বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বাজারের অদূরেই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি নূর আলীর মাথায় বিদ্ধ হলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। তার ছেলে ইব্রাহিমের শরীরে তিনটি গুলি বিদ্ধ হওয়ায় তাকে গুরুতর অবস্থায় তাকে খুলনা আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নূর আলীর অকাল মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে তার বাড়িতে। বার বার কান্না করে মুর্ছা যান স্ত্রী, মা, ভাই-বোনসহ অন্য স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না প্রতিবেশি ও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই বাড়িতে আসা নারী-পুরুষরা। স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে একই দলের প্রতিপক্ষের লোকজন মোটা অংকের টাকা দিয়ে নূর আলী শেখকে হত্যা করিয়েছে।
নিহতের ভাই রুহুল আমিন শেখ বলেন, 'আমার ভাই জনসেবা করতে গিয়ে খুন হলো। ও কালকে সকালেও আমাকে বলেছে কিছু লোক ওকে খুন করতে চায়। মুরাদ ও মুসা- দুইজনে মিলে টাকা দিয়েছে। মুসা গাজী, হুমায়ন মোল্লা গিয়ে ইকবালকে টাকা দিয়ে এসেছে। আমি ভাইকে সাবধানে চলতে বলি। ওই আমার ভাইয়ের সাথে শেষ কথা। মুসা গাজী মেম্বার পদে দাঁড়াতে চায়, ও-ই আমার ভাইকে খুন করিয়েছে।'
তিনি আরো বলেন, 'নূর আলী ব্যাপক জনপ্রিয় ইউপি সদস্য। আগামীতে ওকে হারানোর মতো কোনো প্রার্থী নেই। কারণ এই এলাকা সন্ত্রাসী এলাকা ছিল। আমার ভাই নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার সকলকে নিয়ে রাত্রিকালীন ডিউটিসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি ভালো করে। যে ডাকতো তার পাশেই যেয়ে দাঁড়াতো। গরিবদের নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করতো। এলাকায় ওর থেকে পয়সাওয়ালা লোক মুরাদ; তাকে কেউ মানে না। মুরাদ এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করে। তার বিরুদ্ধে থাকায় আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে।'
নিহতের স্ত্রী বলেন, 'আমাদের পাড়ার মুরাদ চার লাখ টাকা দিয়েছে সন্ত্রাসীদের। ইকবাল, মুছা গাজী, হুমায়ুন মোল্লা এরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। দলাদলি, ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার স্বামীর আর কোনো দোষ নেই। আমি হত্যকারীদের ফাঁসি চাই।'
এলাকাবাসীর দাবি, জনপ্রিয়তার কারণেই দলীয় লোকজনের আক্রোশের শিকার হতে হয়েছে মেম্বার নূর আলী শেখকে। ইব্রাহিম আলী নামে একজন বলেন, 'মেম্বার সাহেব খুব ভালো লোক ছিলেন। এ এলাকায় সন্ত্রাসীদের কারণে আমরা ঘরে থাকতে পারতাম না। মেম্বার গ্রামের সবাইকে নিয়ে এলাকার পরিবেশ ভালো করেছে। তিন-চার বছর এলাকায় শান্তি বিরাজ করছিল। আওয়ামী লীগের মধ্যে দুই গ্রুপ রয়েছে। একদল একটু ক্রিমিনাল। তাদের জন্যই আজকে এ হত্যাকাণ্ড।'
মোক্তার হোসেন নামে অপর একজন বলেন, 'নূর আলীর সাথে একটি পক্ষের দলীয় বিরোধ ৪-৫ বছর ধরে। উপজেলা নির্বাচনে সে একপক্ষে ছিল। এ নিয়ে গোলযোগও হয়। ওই বিরোধ নিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছি।'
তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিন বলেন, 'নূর আলী শেখ অত্যন্ত জনপ্রিয় মেম্বার ছিলেন। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণ্বিত হয়ে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র করতো। দলীয় কোন্দল নিয়েও বিরোধ ছিল। কিন্তু তার জন্য হত্যা হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। তবে ঘটনার সময় নূর আলী শেখের ছেলে আহত হয়েছেন। তিনি সুস্থ হলেই বোঝা যাবে কারা এর সাথে জড়িত।'
এদিকে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। রাতভর পুলিশ পুরো এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।'
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তের ওপর ভিত্তি করে ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। তবে সেটা রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতা।
দুই ছেলেসন্তানের জনক নূর আলী শেখ এলাকায় একজন সফল কাঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।