মৌসুমী নিলু, নড়াইল : ভাষা সংগ্রামী অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন আহমেদের জেলা নড়াইলে ৪৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। জেলায় মোট ৬৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে; এরমধ্যে ৪৪৭টিতে নেই কোনো শহিদ মিনার।
৪৯৫টি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহিদ মিনার নেই ৩৮৪টিতে। ২০৩টি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার মধ্যে ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার স্থাপিত হয়নি।
এ বছর নড়াইলের কৃতিসন্তান ভাষা সংগ্রামী অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন আহমেদ একুশে পদকে ২০২১ (মরণোত্তর) ভূষিত হয়েছেন। তিনি নড়াইলের চাঁচড়া গ্রামে ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নড়াইল মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন, পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য। তার সন্তানেরাও স্ব স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। বড়ছেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী সাঈফ মীজানুর রহমান পিরোজপুরে ম্যাজিস্ট্রেট ও ট্রেজারি অফিসার থাকাকালে স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। সে কারণে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে ১৯৭১ সালের ৫মে নির্মমভাবে নিহত হন। নরপিশাচরা জীবিত মীজানকে ট্রাকের সাথে বেঁধে পিরোজপুরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরিয়ে তাকে হত্যা করে।শহীদ মীজান ইতোপূর্বে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন। আফসার উদ্দিনের মেঝছেলে সাঈফ হাফিজুর রহমান খোকন স্বাধীনতাপূর্ব বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থেকে আইয়ুবশাহীর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে পরপর দুবার সাংসদ হন এবং বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। ছোটছেলে সাঈফ ফাতেউর রহমান শিক্ষাবিদ হিসাবে গবেষণাসহ জাতীয়পর্যায়ে অনেক সৃষ্টিশীল কাজ করে যাচ্ছেন। মেয়ে আফরোজা পারভীন পপী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ক্যাডারে (যুগ্মসচিব) গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে আছেন। তিনি একজন স্বনামধন্য লেখিকা এবং তার লেখা অনেক বই পাঠক সমাদৃত হয়েছে। সর্বকনিষ্ঠ মেয়ের নাম প্রফেসর শারমিনা পারভীন হ্যাপী। তিনি মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান। তারও অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে।
আফসার উদ্দিন আহমেদকে ভাষা সংগ্রামী হিসাবে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করায় সরকারের প্রতি সন্তানরা ও নড়াইলবাসী কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে।
এ বিষয়ে তার সন্তান সাবেক সংসদ সদস্য সাঈফ হাফিজুর রহমান খোকন বলেন, বাংলা ভাষার জন্য অনেকে ভাষা আন্দোলন করতে যেয়ে জীবন দিয়েছেন। যার স্বীকৃতি জাতিসংঘ দিয়েছে। অথচ, নড়াইলসহ সারাদেশে এখনো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার হয়নি- এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার তৈরি করা হোক।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. হুমাউন কবীর বলেন, যে সকল বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নেই; আমরা তার তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে অভিন্ন মডেলে শহিদ মিনার তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ছায়েদুর রহমান জানান, মন্ত্রণালয় থেকে ডিজাইন ও অর্ডার না আসা পর্যন্ত আপাতত আর কোনো শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে না। যদিও অনেকে বেসরকারিভাবে তৈরি করে দিতে আগ্রহী।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে যে ডিজাইন করে পাঠাবে, প্রত্যেক এলাকার স্কুল কর্তৃপক্ষ স্ব স্ব উদ্যোগে তা বাস্তবায়ন করে শহিদ মিনার তৈরি করবে।