স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল (যশোর) : দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার ভারত থেকে ফেরা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের করোনা নেগেটিভ সনদ লাগবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ নির্দেশনা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো দিন কার্যকর হতে পারে বলে জানা গেছে।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে এ ধরনের একটি নির্দেশনাপত্র এসেছে বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগে। তবে, এ সিদ্ধান্ত স্থলপথের পাশাপাশি রেল ও আকাশপথে কার্যকর হচ্ছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার সুজন সেন জানান, আগে বাংলাদেশিদের ভারতে যাওয়ার জন্য এবং ভারতীয়দের বাংলাদেশে প্রবেশে করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক ছিল। তবে, এবার বাংলাদেশিদের ভারত থেকে ফেরার সময় এবং ভারতীয়দের ভারতে ফেরার সময় করোনা নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে বলে নির্দেশনা এসেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের আসা ও যাওয়ার সময় করোনা পরীক্ষার সনদ গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশিদের নেগেটিভ সনদ গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আহসান হাবিব জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন হাতে পেয়েছি। ভারতে যাওয়া ও ভারত থেকে ফেরার সময় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশি-বিদেশি সব যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ সাথে থাকতে হবে বলে বলা হয়েছে। বর্তমানে পূর্বের নিয়মে কার্যক্রম চলছে। পরবর্তী নির্দেশনা পৌঁছানো মাত্র করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ইমিগ্রেশন পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।
বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রী আবু তালেব করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানান। তবে, তিনি জানান- দেশে করোনা পরীক্ষা করতে ভোগান্তির শেষ নেই। সময়মত রিপোর্ট মেলে না। সেকারণে অনেকে ভ্রমণ করতে পারছন না। আবার ভারতে এ পরীক্ষা করাতে তাদের আরো ভোগান্তি বাড়বে। দুর্ভোগ কমাতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
ভারতগামী যাত্রী আনিছুর রহমান বলেন, যে সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে যায়, তার মাত্র ৫ শতাংশ বিদেশিরা আসে বাংলাদেশে। জরুরিভাবে ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা করতে ১৫০০ টাকা লাগছে। তবে, ভারতে বাংলাদেশিদের জন্য করোনা পরীক্ষা ফি কত পড়বে তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। দুইবার করোনা পরীক্ষাতে অর্থের পাশাপাশি ভোগান্তি বাড়বে আমাদের। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা করে পরীক্ষা কার্যক্রম সহজ আর কম খরচে করার আহবান জানান তিনি।
বেনাপোল থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা বেশি যাতায়াত করে থাকে। প্রতিবছর এ পথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ দেশি-বিদেশি যাত্রী যাতায়াত করে। এদের কাছ থেকে ভ্রমণকর বাবদ সরকারের রাজস্ব আসে ১০০ কোটির কাছাকাছি।
চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিরোধ হিসেবে দুই দেশের সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে গত ১৩ মার্চ ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় যাতায়াত বন্ধ হয় বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশেও আটকে পড়ে ভারতীয়রা। এতে বিশেষ করে গুরুতর রোগীরা চিকিৎসার জন্য যেতে না পেরে বেকায়দায় পড়ে। যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরাও বড় ধরনের লোকসানে ছিল। পরবর্তীতে ৫ মাস পর প্রথমে বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরার সুযোগ হয়। পরে বাংলাদেশিদের মেডিকেল আর বিজনেস ভিসায় যাতায়াতে সুযোগ দেয় ভারত সরকার।