রহিদুল ইসলাম খান, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছার বিদেশ ফেরত হেলাল খান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে ড্রাগনের ডগায়। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যে তার ৯ বিঘা জমির ড্রাগন গাছে ফুল ফল আসবে বলে অধির আগ্রহে প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি ।
হেলাল খান ওরফে মিঠু উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের ইয়াকুব আলী খানের ছোট ছেলে। প্রচন্ড মেধাবী হেলাল খান চৌগাছা কামিল মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে চাকরি না করে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান। ভাগ্য গুনে সেখানে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে ভাল বেতনে চাকরি পেয়ে যান। নিজের মেধা কঠোর পরিশ্রম আর যোগ্যতার বলে পদোন্নতি পেয়ে কোস্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করে নেন। এক পর্যায়ে কোম্পানি তাকে একটি প্রজেক্টের দায়িত্ব দিয়ে মালদ্বীপ পাঠিয়ে দেয়। সবমিলিয়ে প্রবাস জীবনে প্রায় ১২ বছর কেটে যায় হেলাল খানের। দেশ মাতৃকার প্রতি ভালবাসা আর নতুন কিছু করার নেশায় দেশে ফিরে আসেন তিনি। নিজেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রমী হেলাল খান গতানুগতিক ব্যবসা না করে ঝুঁকিপূর্ণ এবং কম মুনাফার কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করেন।
প্রথমে তিনি ছাগল পালনের জন্য ফার্ম গড়ে তোলেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে ব্যর্থ হয়ে যান। এরপর তিনি ভিয়েতনামী ড্রাগন ফল চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এলাকার ছোটখাটো দুই একজন ড্রাগন চাষীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তিনি এ চাষে নেমে পড়েন। উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মাঠে নয় বিঘা জমি লিজ (বর্গা ) নেন। এরপর জমি চাষ করে জমিতে ড্রাগন গাছের মাচা তৈরির জন্য দুই হাজার একশত তিনটি আরসিসি খুটি স্থাপন করেন। প্রতিটি খুটিতে চারটি চারা হিসেবে আট হাজার চারশত বারোটি চারা রোপন করেন। বিগত ১৫ মাস ধরে স্বযত্নে পরিচর্যা করছেন চারাগুলো।
হেলাল খান জানান, জমিতে তিনি প্রতিমাসে প্রায় বিশ হাজার টাকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেন । এছাড়া গোবর ও জৈব সারও দিতে হয়। বর্তমানে গাছগুলো ফুল ধরার একবারে উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে গাছগুলোতে ফুল আসা শুরু করবে বলে আশা করছেন তিনি।
কি পরিমান ফল উৎপাদন হতে পারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, প্রতিটি খুঁটির চারটি গাছ থেকে সাত থেকে আট কেজি ফল আসবে বলে আমি আশা করছি বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
ড্রাগন চাষে কি ধরনের সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে হয়। চৌগাছা উপজেলার কোন সারের দোকান থেকে ন্যায্য মূল্যে সার কেনা যায় না। যার ফলে টার্গেটের থেকে খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়।
ব্যবসা বাণিজ্য না করে কেন কৃষি কাজে নামলেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে হেলাল খান বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের ৮৫ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষি কাজে সাথে জড়িত। ফলে দেশটাকে যদি আপনি এগিয়ে নিতে চান তাহলে কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত বেশি পরিশ্রম, কম মুনাফা এবং অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে আমাদের দেশের যুবকেরা এ পেশায় আসতে চায় না। আমি আসলে প্রমাণ করতে চাই কৃষি কাজের মাধ্যমেও সফলতা অর্জন করা যায়। এ প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি বাকিটা আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ।
সরকারি সাহায্য সহযোগিতার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকারি সাহায্য কি সবার কপালে জোটে ? সরকার তো কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য কম সুদে কৃষিঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন কারা সে ঋণ পেয়েছে। যাদের কৃষি কাজের সাথে কোন সর্ম্পক নেই তারা ঋণ নিয়ে বসে আছেন। তিনি আরো বলেন, নয় বিঘা জমিতে দুই হাজার একশো তিনটি খুঁটি স্থাপন করে গাছগুলোকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমি ১৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। ফল উঠানো পর্যন্ত আরো হয়তো তিন থেকে চার লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এই যে এতবড় একটা ঝুঁকি নিয়ে আমি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি কিন্তু কৃষি বিভাগের কাছে এর কোন গুরুত্বও নেই। তাদের কাছে কোন ইনফরমেশনও নেই। প্রতিদিন অনেক মানুষ আমার বাগান দেখতে আসে কিন্তু যাদের আসার কথা তারা একদিনও এলেন না এই আরকি!
তিনি আরো বলেন, আজ ১৫ মাসের মধ্যে আমার এ ক্ষেতে কোন কৃষি কর্মকর্তার পদধুলি পড়েনি। অথচ এ ইউনিয়নে কর্মপক্ষে চারজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। তারা কোথায় কাজ করেন আল্লাহতায়ালা ভালো জানেন।
ড্রাগন চাষ সর্ম্পকে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, ড্রাগন প্রধানত উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের ফসল। পৃথিবীর যে সমস্ত এলাকায় দিনের দৈঘ্য বেশি সেসব দেশে ড্রাগনের উৎপাদন ভাল হয়। আমাদের দেশেও ড্রাগনের চাষ বেশ আশাব্যঞ্জক। যারা চাষ করছেন তারা ভাল ফল পাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যারোটিন উপাদান আছে । যা মানবদেহের জন্য উপকারী।