আব্দুস সামাদ, সাতক্ষীরা : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে প্রার্থিতার খবর জানান দিতে কাজ শুরু করেছেন কলারোয়া উপজেলার তিন নম্বর কয়লা ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
নির্বাচনে অংশ নিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী যেমন মাঠে নেমেছেন তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জানান দিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন। অন্যদিকে, প্রকাশ্যে সামনে না এলেও আড়ালে মাঠে নেমেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীও। আবার স্বতন্ত্রভাবেও অনেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি চায়ের দোকানগুলোতেও শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। অনেকে আবার কষতে শুরু করেছেন চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনী প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও। প্রার্থীদের রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে ইউনিয়নের মোড়ে মোড়ে, হাটে-বাজারে। অনেকেই আবার করোনা প্রতিরোধের সতর্কতামূলক মাইকিং প্রচার করেও প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগের পাশাপাশি আগামী কয়লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় ইতোমধ্যে দোঁড়ঝাপ শুরু করেছেন কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ ইমরান হোসেন।
সেই সাথে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ শুরু করেছেন সর্বশেষ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নৌকার প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিদুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ ও এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সোহেল রানা।
এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে চান উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সমর্থক শেখ বাবু আহমেদ।
নির্বাচনে অংশ নিতে চান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিবও। তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে টানা তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন বলেন, '২০১৬ সালের নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে কয়লা ইউনিয়নবাসীর সেবায় নিয়োজিত আছি। আবার জনগণ যদি আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে তাহলে কয়লা ইউনিয়নের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করে মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত একটি মডেল ইউনিয়নে রূপান্তরিত করবো।'
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিদুল রহমান বলেন, 'গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবারও দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী। মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে অবহেলিত কয়লা প্রতিবন্ধী স্কুলের উন্নয়ন ও কাঁচা রাস্তা সংস্কার এবং দুর্নীতিমুক্তভাবেই উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করবো।'
উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, 'উপজেলার সব থেকে কম জনবহুল ও ছোট্ট একটি ইউনিয়ন কয়লা। এখানে দুর্নীতিমুক্ত ভাবে কাজ করলে এলাকার মানুষ সুখী সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারবে। জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত, জবাবদিহিতামুলক ও দুর্নীতিমুক্ত ইউনিয়ন গড়তে কাজ করবো। দল আমাকে নির্বাচনী কাজের প্রস্তুতি নিতে বলেছে, পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনের কার্যক্রম করে যাচ্ছি।'
এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সোহেল রানা বলেন, 'নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেব। তবে, যদি স্বচ্ছ নির্বাচন হয় এবং দল আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কয়লা ইউনিয়নকে জনকল্যাণমুখী একটি ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলবো। পাশাপাশি আলাইপুর এক নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড়ের কাঁচা রাস্তার ইটের সোলিং, ঋষিপাড়া হস্তশিল্প কমিটি গঠন, সৎ মানসিকতা নিয়ে সার্বক্ষণিক মানুষের পাশে থেকে মাদক, দুর্নীতি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করবো।'
কয়লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'সাধারণ মানুষের সহযোগিতা, স্বচ্ছসেবা ও এলাকার উন্নয়নের জন্যই নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই। নৌকা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। যদি দল আমাকে নৌকা প্রতীক দেয় তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।'
আওয়ামী লীগ সমর্থক শেখ বাবু আহমেদ বলেন, 'খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করতে চাই। সুবিধাবঞ্চিত কয়লা ঋষিপাড়া থেকে ঘোষপাড়া পর্যন্ত কুমিরনল থেকে মুরারীকাটি কাঁচা রাস্তা সংস্কার করতে চাই। পাশাপাশি এলাকাবাসী আমাকে নির্বাচিত করলে সঠিক সেবাটি মানুষের দোরগোড়ায় পাশে থেকে পৌঁছে দিতে চাই।'
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক তিনবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রকিব বলেন, 'কয়লা ইউনিয়নটি একটি আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা। এলাকাবাসীর সুপেয় পানির প্রয়োজন অপরিসীম। এলাকাবাসীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ সরকার কর্তৃক সকল বাজেট বরাদ্দ নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী বিতরণ করে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চায়। প্রচার-প্রচারণা এখনো শুরু করেনি। তবে, মানুষের পাশে আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনটি থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করে যাচ্ছি।'
কয়লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, 'দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকার সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবো।'
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা হলে কয়লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কয়লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছয় হাজার ৯৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার তিন হাজার ৪০৭ জন ও মহিলা ভোটার তিন হাজার ৫৩৯ জন।