স্টাফ রিপোর্টার : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সময় সংকোচনের প্রতিবাদে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সকল প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে যশোরের ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উদীচী কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় বসে এই সিদ্ধান্ত নেন সংগঠনগুলোর কর্ণধাররা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও উদীচী যশোরের সভাপতি ডি এম সাহিদুজ্জামান।
সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সংগঠকরা বলছেন, নতুন বছর বরণ করতে যশোরের বিভিন্ন সংগঠন প্রায় তিন যুগ ধরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এর মধ্যে রয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মিষ্টিমুখ, গান-বাজনা প্রভৃতি। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শহরের ২০টির মতো স্পটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। এসব অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষ অংশ নেন। যে কারণে যশোরের নববর্ষের অনুষ্ঠান সর্বজনীন রূপ নিয়েছে।
তারা বলছেন, কিন্তু গত চার বছর ধরে নাশকতা ও জঙ্গি হামলার শংকা প্রকাশ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় সংকোচন করছে সরকার। এতে করে সংগঠনগুলো পরিতৃপ্তির সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারছে না। অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের যে লক্ষ্য নিয়ে এই সাংস্কৃতিক উৎসব হতো তা তথাকথিত মৌলবাদীদের ভয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই ভয়ের বৃত্ত থেকে বাইরে আসতে চান। যে কারণে তারা সরকারের এই ‘সময় সংকোচন নীতি’র বিরোধিতা করে আসছেন।
গত তিন বছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; যা মানতে পারছে না যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে আজকের জরুরি সভা ডাকা হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ডি এম সাহিদুজ্জামান বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে পহেলা বৈশাখের সকল অনুষ্ঠান বর্জনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সময় সংকোচন নীতি’ প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী রোববার সকালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এছাড়া ওইদিন বিকেলে শহরের গাড়িখানা রোডে প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘২০টি সংগঠন বৈঠকে অংশ নিলেও তারা সবাই জোটের সদস্য না। আমাদের সবার প্রত্যাশা, পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কোনো বিধিনিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ না করা হোক। ঝুঁকি থাকলে তা নিরসনে নিরাপত্তা জোরদারে প্রশাসনকে ভূমিকা নিতে হবে।’
সভায় শিল্পকলা একাডেমি ও সুরধুনী সঙ্গীত একাডেমির সেক্রেটারি মাহমুদ হাসান বুলু, পুনশ্চ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা সুকুমার দাস, বিবর্তন যশোরের সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু, চাঁদের হাট যশোরের প্রতিষ্ঠাতা ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, সুরবিতানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসুদেব বিশ্বাস, নৃত্যবিতানের পরিচালক সঞ্জীব চক্রবর্তী প্রমুখ হাজির ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকার বাইরে যশোরেই সবচেয়ে আড়ম্বরে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। বিখ্যাত মঙ্গল শোভাযাত্রার যাত্রাও যশোর থেকেই। এবারের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান জৌলুসপূর্ণ করতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।